একমাত্র বাঁশের সাঁকোই হচ্ছে ১৫ গ্রামের মানুষের চলাচলের ভরসা

meherpurerkanthomeherpurerkantho
  প্রকাশিত হয়েছেঃ  09:59 PM, 09 January 2023

একমাত্র বাঁশের সাঁকোই হচ্ছে ১৫ গ্রামের মানুষের চলাচলের ভরসা

জাহাঙ্গীর আলম সবুজ : মেহেরপুর জেলা প্রতিনিধি :

সরকার আসে সরকার পরিবর্তন হয়। ভোটের সময় রাজনীতিবিদরা আসেন। জনগণের দুঃখ দুর্দশার কথা জেনে চোখের পানি ফেলেন। আবার নির্বাচিত হলে সেই আগের মতই পরিবর্তন হয়ে যান। এভাবেই চললে আশা নিরাশারা দোলাচলে ৫১ বছর। জনপ্রতিনিধির প্রতিশ্রুতি আর জনগণের প্রত্যাশার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে গাংনী উপজেলার গাঁড়াবাড়ীয়া-হিতিমপাড়া গ্রামের ভৈরব নদীর উপর খেয়াঘাটের ব্রিজ নির্মাণ।

জনগণের প্রত্যাশিত ব্রীজটি নির্মিত না হওয়ায় বাঁশের সাঁকোই এইসব গ্রামের মানুষের শেষ সম্বল। জীবনের চরম ঝুঁকি নিয়ে প্রতিদিন চলাচল করে ১৫ গ্রামের প্রায় লক্ষাধিক মানুষ। নিজেদের প্রয়োজনের তাগিদে বিগত ৫১ বছর যাবৎ গ্রামের মানুষ নিজেরা বাঁশ খুটি দিয়ে সেতু তৈরী করে চলাচলের ব্যবস্থা করেছে। এই নড়বড়ে বাঁশের সাঁকোই অনেকবার দুর্ঘটনা ঘটেছে। অনেকেই হয়েছেন আহত। তারপরেও গ্রামের মানুষের চলাচলে একমাত্র ভরসা এই নড়বড়ে বাঁশের সাঁকো।

মানুষ জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করলেও আজও চোখে পড়েনি জনপ্রতিনিধি বা সরকারী কোন কর্তৃপক্ষের । ফলে ২ টা উপজেলার (সদর ও গাংনী) মানুষের সেতু বন্ধন অধরাই রয়ে গেছে। বাঁশের সেতুটি দিয়ে সদর উপজেলার হিতিমপাড়া, কুতুবপুর, তেরঘরীয়া, শোলমারী, ভিটাপাড়া, রামদাসপুর শুভরাজপুর, কালিগাংনী, দিঘিরপাড়া, উজলপুর গাংনী উপজেলার গাড়াবাড়ীয়া, কাথুলী, সহগলপুর, রামকৃষ্ণপুর ধলা, রাধাগোবিন্দপুর ধলাসহ ১৫ টি গ্রামের মানুষ জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পারাপার করে থাকেন এই বাঁশের সেতু দিয়ে।

সেতুটির পশ্চিম পাশের অন্তত ৫ টি গ্রামের মানুষকে নিত্যদিন তাদের কৃষি পণ্য সংগ্রহ, বিপণন, চিকিৎসা ও শিক্ষার্থীদের স্কুল কলেজে যেতে হয়। গাড়াবাড়িয়া গ্রামে পূর্ব দিকেরও ৫ টি গ্রামের মানুষকে নানা কাজে যাতায়াত করতে হয় নদীর অপর দিকের গ্রামগুলোতে। গত বছর ভারি বর্ষণে বাঁশের সেতুটি পানির নিচে তলিয়ে যাওয়ায় বর্তমানে বাঁশের এই সেতুটি এখন দুর্বল কাঠামোর উপর দাঁড়িয়ে আছে। সেতুটি ভেঙ্গে গিয়ে যে কোন সময় মারাত্মক দুর্ঘটনা ঘটতে পারে এমন আশঙ্কা এলাকাবাসীর।

মেহেরপুর শহর থেকে উত্তরাঞ্চলের সেতু গুলোর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও ব্যস্ততম সেতু হচ্ছে গাড়াবাড়িয়া-হিতিমপাড়া সেতু। ভৈরব নদী খননের পর ওই সেতুর আশে-পাশে কম গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় চারটি ব্রিজ নির্মাণ করা হলেও গাড়াবাড়িয়া-হিতিমপাড়া সেতুটি আজও নির্মাণ করা হয়নি। গাড়াবাড়ীয়া গ্রামের আব্দুর রশিদ জানান, ছোট বেলা থেকেই শুনে আসছি ব্রিজটি হবে। কিন্তু অদ্যাবধি ব্রিজ নির্মাণ হয়নি। হয়তো আমরা ব্রিজ দেখে যেতে পারবো না। প্রতি বারই জনপ্রতিনিধিরা আমাদের বিভিন্ন আশ্বাস দিয়ে যান কিন্তু তার বাস্তবায়ন হয়না।

আমেনা খাতুন নামের এক বৃদ্ধা জানালেন, ভোটের সময় ভোট নিতে আসে। সে সময় আমাদের বিভিন্ন আশ্বাস দেই তারা। বলে আমি নির্বাচিত হলে সেতু নির্মাণ করে দেবো। কিন্তু ভোট পেয়ে ভুলে যায় তার দেওয়া প্রতিশ্রতির কথা। হিতিমপাড়া এলাকার কৃষক বাদল আলী জানান, এই ভয়ঙ্কর সেতুটি দিয়েই এলাকার কৃষকরা তাদের উৎপাদিত পণ্য মাঠ থেকে বাড়ি নিয়ে আসেন। অনেকবার ভেঙ্গে পড়ে গেছে। কৃষকরা হারিয়েছেন ফসল। গাঁড়াবাড়িয়া গ্রামের রহিম উদ্দীন ও এলেম উদ্দীন বলেন, এলাকার সংসদ সদস্য, এলজিইডি থেকে বার বার আশা-ভরসা দিলেও সেতুটি বাস্তবায়নে এগিয়ে আসেনি কেউ।

স্থানীয় মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মাবিয়া খাতুন, লাভলী খাতুন, রাসেল আহমেদ বলেন, ব্রিজ না থাকায় বাঁশের সাঁকো দিয়ে ঝুকি নিয়ে স্কুলে যাতায়াত করতে হয়। বর্ষার সময় সাঁকো ডুবে গেলে অনেক দুরের রাস্তা কাথুলী ব্রিজ দিয়ে স্কুল কলেজে যেতে হয়। তাতে খরচ বেশি হওয়া সহ পড়াশুনা মারাত্মকভাবে বিঘ্নিত হয়।

কুতুবপুর স্কুল এন্ড কলেজের আক্তারুজ্জামান লাভলু বলেন, উপজেলার দু’টি ইউনিয়নের ১৫ গ্রামের ছেলে-মেয়েদের উচ্চ শিক্ষার জন্য এই ব্রিজ দিয়ে যাতায়াত করতে হয়। অথচ কম গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় ব্রিজ হলেও এই ব্রিজটি আজও হলোনা।

কাথুলী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান রানা বলেন, শত বছরের পুরাতন এই খেয়া ঘাটটিতে আজও ব্রিজ নির্মাণ করা হয়নি। ব্রিজ নির্মাণ হলে দুই উপজেলার মানুষ এর সুফল ভোগ করবে। ব্রিজটি দ্রত নির্মাণের দাবি করে তিনি বলেন এতদঞ্চলের মানুষের দীর্ঘদিনের প্রাণের দাবি ব্রিজ নির্মাণের। ব্রিজটি নির্মিত হলে শিক্ষার পাশাপাশি অর্থনেতিক উন্নয়ন হবে। পাশাপাশি জনগণের দুর্ভোগ কমবে।

গাংনী এলজিইডি’র নির্বাহী প্রকৌশলী ফয়সাল হাসান বলেন, গাড়াবাড়িয়া-হিতিমপাড়া ব্রিজ নির্মাণে প্রপোজাল পাঠানো হয়েছিল। তবে ত্রুটিযুক্ত হওয়ায় তা ফিরে এসেছে। আমরা আবার সংশোধন করে প্রপোজালটি পাঠিয়ে দেব।

আপনার মতামত লিখুন :